এ যেন এক ক্লিক দূরত্ব, যেন চোখের
পলক! মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে
পরিমাণ ও ফোন নম্বর লিখে টাচ
করলেই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে অর্থ
চলে যাচ্ছে ভারত, সিঙ্গাপুর,
মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন
দেশে। বিদেশে টাকা পাঠানোর
ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা নীতি আইন
কাগুজে ঠোঙার চেয়েও মূল্যহীন করে
ফেলছে বিকাশের এজেন্ট নামধারী
এক শ্রেণির অর্থপাচারকারী।
বিদেশে অবস্থান করা হুন্ডি
ব্যবসায়ীদের এজেন্ট হিসেবে কাজ
করছে বিকাশের এই অসাধু এজেন্টরা।
এই অবৈধ হুন্ডির কারণে ব্যাংকের
ছোট অঙ্কের রেমিট্যান্স আসা অনেক
কমে গেছে বলে জানান একটি
ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সমাধানে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল
ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ)
নজরদারি কার্যকর প্রমাণিত হতে
পারে বলে মনে করছেন এ খাতের
বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি অস্বীকার করে
না বিকাশ কর্তৃপক্ষও। প্রতিষ্ঠানটির
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)
কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘কিছু অসাধু
ব্যক্তি আমাদের এই সেবাকে
অপব্যবহার করার চেষ্টা করে থাকে। ’
বৈদেশিক মুদ্রা নীতি আইন অনুযায়ী,
বিদেশ থেকে দেশে অর্থ পাঠাতে
হলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে
পাঠাতে হয়। আর বাংলাদেশ থেকে
বিদেশে অর্থ পাঠাতে হলে
বাংলাদেশ ব্যাংকের আগাম অনুমতি
নিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে
হবে। কিন্তু বিকাশের এজেন্টরা
বিদেশি হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে
মিলেমিশে অর্থ পাঠানোর কাজ
করছে, যা অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন
অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি
অপরাধ। বিকাশের মাধ্যমে এভাবে
অর্থ পাচার করার বিষয়টি বাংলাদেশ
ব্যাংজেরও অজানা নয়।
গত বছরের শুরুর দিকে রেমিট্যান্স কমে
যাওয়ার কারণ সরেজমিনে গিয়ে
দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি
তদন্তদল মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর,
সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে যায়।
তারা সেখানে দেখেছে, বাংলায়
বিকাশের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে
প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স
নিয়ে দেশে পাঠানো হচ্ছে। একইভাবে
বাংলাদেশ থেকে বিকাশ করে টাকা
পাঠানো হচ্ছে ভারতের কলকাতা,
চেন্নাইসহ বিভিন্ন স্থানে, অর্থ
যাচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ
আরো কিছু দেশেও। বিকাশের এসব
এজেন্ট মোবাইল ব্যাংকিংয়ের
মাধ্যমে, এমনকি অপহরণের পর মুক্তিপণ
আদায় করছে; শোধ করা হচ্ছে মাদকসহ
বিভিন্ন চোরাই পণ্য আনার মূল্য। জঙ্গি
অর্থায়নেও চ্যানেলটি ব্যবহৃত হওয়ার
অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ
শুল্ককরের কারণে অনেক
আমদানিকারক পণ্যের দাম কম
দেখিয়ে ব্যাংকে ঋণপত্র খুলে
থাকেন। পণ্যের দামের বাড়তি অর্থ
তাঁরা পরিশোধ করেন বিকাশের
মাধ্যমে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ
ব্যাংক দুই হাজার ৮৭৭টি এজেন্ট
বাতিল করে সেগুলো নিয়ে তদন্ত করতে
সিআইডিকে দায়িত্ব দিয়েছে।
দেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা
চালুর আগেও হুন্ডি করে বিদেশ থেকে
টাকা আনা যেত, বিদেশে টাকা
পাঠানোও যেত। তবে তাতে সময় লাগত
অনেক বেশি। তখন হুন্ডিকারীদের
নির্দিষ্ট গন্তব্যে গিয়ে টাকা পৌঁছে
দিয়ে আসতে হতো। কিন্তু বিকাশ
এজেন্টদের সেই দুর্বলতা নেই। মুহূর্তেই
বিকাশ করে অর্থ পাঠিয়ে দিচ্ছে
পাচারকারীর দেওয়া মোবাইল নম্বরে।
এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে প্রায়ই
এজেন্ট নম্বরের বদলে ব্যক্তিগত
বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে
তারা। রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কম,
সময় নষ্ট করে দূরের ব্যাংকে যেতে হয়
না। ফলে বেশির ভাগ প্রবাসী বিদেশ
থেকে বিকাশের মাধ্যমেই হুন্ডি করা
পছন্দ করছে। আবার বাংলাদেশ থেকে
বিদেশে টাকা পাঠানো বড় ঝক্কি-
ঝামেলার ব্যাপার। বিশেষ প্রয়োজনে
টাকা পাঠাতে হলে বাংলাদেশ
ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়, তবে তা
সহজে পাওয়া যায় না। এ জন্য
অপেক্ষা করতে হয় লম্বা সময়। তাই
বিকাশের মাধ্যমে মুহূর্তেই
ঝামেলাহীনভাবে অর্থপাচার বাড়ছে
বিদেশে।
সিঙ্গাপুরের ‘লিটল ইন্ডিয়া’র সৈয়দ
আলী রোডে মোস্তফা সেন্টারের
উল্টো দিকে রয়েছে সারি সারি ছোট
ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান।
প্রতিষ্ঠানগুলো আকারে ছোট। কিছুদিন
আগে স্থানটি সরেজমিন ঘুরে দেখা
যায়, প্রায় প্রতিটি দোকানে একটি
করে বিকাশের সাইনবোর্ড রয়েছে।
সাইনবোর্ডে বাংলায় বড় হরফে লেখা
রয়েছে ‘এখানে বাংলাদেশে বিকাশ
করা হয়’।
কিভাবে সিঙ্গাপুর থেকে
বাংলাদেশে টাকা পাঠানো হয়
জানতে চাইলে ‘বিকাশ’
সেবাদানকারী এক দোকানের
বাংলাদেশি কর্মচারী মোসলেম
উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সিঙ্গাপুরে অর্থ
নিচ্ছি। বাংলাদেশে আমাদের বিকাশ
এজেন্ট রয়েছে, আমাদের মাধ্যমে তথ্য
পেয়ে তারা বিকাশ করে দিচ্ছে। এ
ক্ষেত্রে আমরা ভাইবার অ্যাপে
এখানকার বিকাশ নম্বর ও টাকার
পরিমাণ বাংলাদেশের বিকাশ
এজেন্টকে জানিয়ে দিই। সঙ্গে সঙ্গে
সেটি নির্দিষ্ট নম্বরে বিকাশ হয়ে
যায়। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের
বুকিত বিনতাং, চায়না টাউনসহ বেশ
কিছু এলাকায়ও দেখা গেছে বিকাশের
মাধ্যমে বাংলাদেশে অর্থ পাঠানোর
সাইনবোর্ড।
জানা যায়, ঢাকার ইস্কাটনের একটি
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কাজল ইসলাম গত
মাসে ভারতের কলকাতায় যান। সেখান
থেকে দেশে আসার আগেই তাঁর অর্থ
খরচ হয়ে যায়। পরে তিনি তাঁর এক
সহকর্মীকে কলকাতার একটি বিকাশ
দোকানের নম্বর দিয়ে ২৫ হাজার টাকা
পাঠাতে বলেন। ঢাকায় এক বিকাশ
এজেন্টকে দেওয়া ২৫ হাজার টাকা দুই
মিনেটের মধ্যেই কাজল ইসলামের
হাতে পৌঁছে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কালের
কণ্ঠকে বলেন, বিকাশের মাধ্যমে
বিদেশ থেকে হুন্ডি করে টাকা আসছে,
আবার দেশ থেকেও হুন্ডি করে
বিদেশে টাকা পাঠানো হচ্ছে। তারা
বিভিন্ন অনৈতিক কাজেও অর্থ
স্থানান্তর করছে। এ ধরনের বেশ কিছু
ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকও জানে,
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও
কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
অপরাধীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে
কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এটা
রোধ করা সম্ভব হবে।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, অর্থপাচার
প্রতিরোধ ও অবৈধ লেনদেন বন্ধে
বিকাশের কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব
রয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচার করতে
বা হুন্ডি করে দেশে টাকা আনার
ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই এজেন্টদের কাছে
কোনো ধরনের বার্তা আসে। সেগুলো
সংরক্ষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক
যাচাই-বাছাই করতে পারে। এ ধরনের
অবৈধ লেনদেন বন্ধে দেশে আইন আছে,
শুধু যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি
গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদও
একই তথ্য দেন। তিনি কালের কণ্ঠকে
বলেন, শুধু বিকাশের মাধ্যমেই অবৈধ
হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ
আসছে, আবার বাংলাদেশ থেকে
বিদেশে অর্থ যাচ্ছে। এ খবর
বাংলাদেশ ব্যাংকও জানে। তারা
প্রায় বিকাশের তিন হাজার এজেন্ট
বাতিল করেছে।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন,
বিদেশ থেকে অর্থ আনতে বা দেশ
থেকে বিদেশে অর্থ পাঠাতে এক
ধরনের কোড ব্যবহার করে হুন্ডি
ব্যবসায়ীরা। বিকাশের এজেন্টরা যে
এর সঙ্গে যুক্ত তা সবাই জানার পরও
ধরা খুবই কঠিন। তবে বাংলাদেশ
ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট
(বিএফআইইউ) এসব বার্তা বা কোডের
ওপর নজরদারি করছে। যারা এসব
অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বিএফআইইউয়ের তৎপরতার মাধ্যমেই
বিকাশের মাধ্যমে অর্থপাচার
প্রতিরোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর
ও বিএফআইইউয়ের প্রধান আবু হেনা
মোহা. রাজী হাসান কালের কণ্ঠকে
বলেন, ‘বিকাশের দুই হাজার সাত শরও
বেশি এজেন্ট আমরা বাতিল করেছি।
আমাদের ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টের
ভিত্তিতে যেসব এজেন্ট গুরুতর
অপরাধের সঙ্গে জড়িত, আমাদের
দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের
বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ’
একটি বেসরকারি ব্যাংকের
ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাম
প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে
বলেছেন, বিকাশের মাধ্যমে অবৈধ
হুন্ডির কারণে তাঁর ব্যাংকের ছোট
অঙ্কের রেমিট্যান্স আসা অনেক কমে
গেছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য,
সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় প্রবাসী
বাংলাদেশিরা পাঁচ হাজার থেকে ৫০
হাজার টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্স
ব্যাংকের মাধ্যমে না পাঠিয়ে
বিকাশের মাধ্যমে পাঠাচ্ছে। কয়েক
বছর ধরে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার
পেছনে বিকাশের অবৈধ হুন্ডি
অনেকাংশে দায়ী বলেই মনে করেন
তিনি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিদেশে
থাকা বাংলাদেশি হুন্ডি
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে
দুইভাবে বিকাশের এজেন্টরা
অর্থপাচারের কাজটি করছে। সৌদি
আরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত
আরব আমিরাত, এমনকি অস্ট্রেলিয়া,
কানাডা ও যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি
অধ্যুষিত এলাকায় বিকাশের
সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অবৈধ অর্থপাচার
কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশের
বিকাশের এজেন্টরা তাদের কো-
এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
বিদেশ থেকে কেউ দেশে টাকা
পাঠাতে চাইলে ওই সব কো-এজেন্ট
বাংলাদেশিদের কাছ থেকে টাকা
নিয়ে দেশে থাকা বিকাশের
এজেন্টকে ফোন করে বা এসএমএস করে
যিনি টাকা পাঠাবেন তাঁর পরিবারের
মোবাইল নম্বর ও টাকার পরিমাণটা
জানিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যেই
বাংলাদেশ থেকে বিকাশের এজেন্ট
সংশ্লিষ্ট নম্বরে টাকা পাঠিয়ে
দিচ্ছে। ফলে বিদেশ থেকে
বাংলাদেশে কার্যত কোনো অর্থ
আসছে না। একইভাবে বাংলাদেশ
থেকে বিকাশের এজেন্টদের মাধ্যমে
অহরহই টাকা যাচ্ছে ভারতের কলকাতা,
চেন্নাইসহ বিভিন্ন শহর ও সিঙ্গাপুর,
মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে।
জানা যায়, বিকাশের ব্যবসায়িক
এজেন্টের ভূমিকায় থাকা একটি চক্র
বিদেশে যেসব এলাকায়
বাংলাদেশিরা বেশি থাকে, তার
নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে। তারা
মহল্লাভিত্তিক বিকাশের কো-এজেন্ট
নিয়োগ করে। বাংলাদেশের এজেন্ট
বা বিদেশে থাকা কো-এজেন্টের
মধ্যে সমন্বয় রাখতে তারা নির্দিষ্ট
সফটওয়্যার ব্যবহার করে। এজেন্টের
কাছে জামানত বাবদ নির্ধারিত
অঙ্কের অর্থ জমা দিলে সফটওয়্যারে
ঢুকতে পারে কো-এজেন্টরা। এরপর কো-
এজেন্টরা মাঠপর্যায়ে যাঁরা
বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে চান,
তাঁদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।
কো-এজেন্ট মোবাইল নম্বর ও টাকার
অঙ্ক সফটওয়্যারের মাধ্যমে পাঠিয়ে
দেয় দেশের বিকাশ এজেন্টের কাছে।
তখন এজেন্ট ওই সব নম্বরে নির্ধারিত
অঙ্কের অর্থ বিকাশ করে পাঠিয়ে
দেয়। মূলত সময় সাশ্রয় ও অর্থ সাশ্রয়ের
জন্যই প্রবাসীরা এ ধরনের হুন্ডি
ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিকাশে দেশে
টাকা পাঠাচ্ছেন।
বিকাশের মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন ও
মুদ্রাপাচারের মামলায় গত ৪ জানুয়ারি
দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান
চালিয়ে আট বিকাশ এজেন্টকে
গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত
বিভাগ সিআইডি। তারা সবাই
বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডি করে বিদেশ
থেকে অর্থ আনা ও বিদেশে
অর্থপাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে
অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয়
বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
(সিইও) কামাল কাদিরের সঙ্গে। তিনি
গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন,
‘আমরা সন্দেহজনক লেনদেনের
ব্যাপারে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ
ব্যাংকের কাছে তথ্য সরবরাহ করছি।
আমাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই
সন্দেহজনক এজেন্টদের ব্যাপারে তদন্ত
করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী অবৈধ অর্থ লেনদেনের সঙ্গে
যুক্ত বিকাশ এজেন্টদের গ্রেপ্তার
করছে। আমরা এ উদ্যোগকে সাধুবাদ
জানাই। এর ফলে সব এজেন্ট নিয়ম-
নীতি মেনে ব্যবসা করতে উদ্বুদ্ধ হবে। ’
বিদেশে বিকাশের লোগো ব্যবহার
সম্পর্কে কামাল কাদির বলেন, ‘এটি
সম্পূর্ণ অবৈধ। বিদেশে আমাদের
কোনো এজেন্ট নেই। বিদেশে
বাংলাদেশি দূতাবাস এবং স্থানীয়
আইনজীবী নিয়োগ করে আমরা
জানিয়ে দিয়েছি কেউ বিকাশের
লোগো ব্যবহার করলে তাদের
ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
কিছু অসাধু ব্যক্তি আমাদের এই
সেবাকে অপব্যবহার করার চেষ্টা করে
থাকে। তবে আমরা সজাগ থাকার
কারণে দিন দিন এই সংখ্যা কমে
আসছে। ’
পলক! মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে
পরিমাণ ও ফোন নম্বর লিখে টাচ
করলেই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে অর্থ
চলে যাচ্ছে ভারত, সিঙ্গাপুর,
মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন
দেশে। বিদেশে টাকা পাঠানোর
ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা নীতি আইন
কাগুজে ঠোঙার চেয়েও মূল্যহীন করে
ফেলছে বিকাশের এজেন্ট নামধারী
এক শ্রেণির অর্থপাচারকারী।
বিদেশে অবস্থান করা হুন্ডি
ব্যবসায়ীদের এজেন্ট হিসেবে কাজ
করছে বিকাশের এই অসাধু এজেন্টরা।
এই অবৈধ হুন্ডির কারণে ব্যাংকের
ছোট অঙ্কের রেমিট্যান্স আসা অনেক
কমে গেছে বলে জানান একটি
ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সমাধানে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল
ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ)
নজরদারি কার্যকর প্রমাণিত হতে
পারে বলে মনে করছেন এ খাতের
বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি অস্বীকার করে
না বিকাশ কর্তৃপক্ষও। প্রতিষ্ঠানটির
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)
কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘কিছু অসাধু
ব্যক্তি আমাদের এই সেবাকে
অপব্যবহার করার চেষ্টা করে থাকে। ’
বৈদেশিক মুদ্রা নীতি আইন অনুযায়ী,
বিদেশ থেকে দেশে অর্থ পাঠাতে
হলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে
পাঠাতে হয়। আর বাংলাদেশ থেকে
বিদেশে অর্থ পাঠাতে হলে
বাংলাদেশ ব্যাংকের আগাম অনুমতি
নিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে
হবে। কিন্তু বিকাশের এজেন্টরা
বিদেশি হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে
মিলেমিশে অর্থ পাঠানোর কাজ
করছে, যা অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন
অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি
অপরাধ। বিকাশের মাধ্যমে এভাবে
অর্থ পাচার করার বিষয়টি বাংলাদেশ
ব্যাংজেরও অজানা নয়।
গত বছরের শুরুর দিকে রেমিট্যান্স কমে
যাওয়ার কারণ সরেজমিনে গিয়ে
দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি
তদন্তদল মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর,
সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে যায়।
তারা সেখানে দেখেছে, বাংলায়
বিকাশের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে
প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স
নিয়ে দেশে পাঠানো হচ্ছে। একইভাবে
বাংলাদেশ থেকে বিকাশ করে টাকা
পাঠানো হচ্ছে ভারতের কলকাতা,
চেন্নাইসহ বিভিন্ন স্থানে, অর্থ
যাচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ
আরো কিছু দেশেও। বিকাশের এসব
এজেন্ট মোবাইল ব্যাংকিংয়ের
মাধ্যমে, এমনকি অপহরণের পর মুক্তিপণ
আদায় করছে; শোধ করা হচ্ছে মাদকসহ
বিভিন্ন চোরাই পণ্য আনার মূল্য। জঙ্গি
অর্থায়নেও চ্যানেলটি ব্যবহৃত হওয়ার
অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ
শুল্ককরের কারণে অনেক
আমদানিকারক পণ্যের দাম কম
দেখিয়ে ব্যাংকে ঋণপত্র খুলে
থাকেন। পণ্যের দামের বাড়তি অর্থ
তাঁরা পরিশোধ করেন বিকাশের
মাধ্যমে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ
ব্যাংক দুই হাজার ৮৭৭টি এজেন্ট
বাতিল করে সেগুলো নিয়ে তদন্ত করতে
সিআইডিকে দায়িত্ব দিয়েছে।
দেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা
চালুর আগেও হুন্ডি করে বিদেশ থেকে
টাকা আনা যেত, বিদেশে টাকা
পাঠানোও যেত। তবে তাতে সময় লাগত
অনেক বেশি। তখন হুন্ডিকারীদের
নির্দিষ্ট গন্তব্যে গিয়ে টাকা পৌঁছে
দিয়ে আসতে হতো। কিন্তু বিকাশ
এজেন্টদের সেই দুর্বলতা নেই। মুহূর্তেই
বিকাশ করে অর্থ পাঠিয়ে দিচ্ছে
পাচারকারীর দেওয়া মোবাইল নম্বরে।
এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে প্রায়ই
এজেন্ট নম্বরের বদলে ব্যক্তিগত
বিকাশ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে
তারা। রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কম,
সময় নষ্ট করে দূরের ব্যাংকে যেতে হয়
না। ফলে বেশির ভাগ প্রবাসী বিদেশ
থেকে বিকাশের মাধ্যমেই হুন্ডি করা
পছন্দ করছে। আবার বাংলাদেশ থেকে
বিদেশে টাকা পাঠানো বড় ঝক্কি-
ঝামেলার ব্যাপার। বিশেষ প্রয়োজনে
টাকা পাঠাতে হলে বাংলাদেশ
ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়, তবে তা
সহজে পাওয়া যায় না। এ জন্য
অপেক্ষা করতে হয় লম্বা সময়। তাই
বিকাশের মাধ্যমে মুহূর্তেই
ঝামেলাহীনভাবে অর্থপাচার বাড়ছে
বিদেশে।
সিঙ্গাপুরের ‘লিটল ইন্ডিয়া’র সৈয়দ
আলী রোডে মোস্তফা সেন্টারের
উল্টো দিকে রয়েছে সারি সারি ছোট
ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান।
প্রতিষ্ঠানগুলো আকারে ছোট। কিছুদিন
আগে স্থানটি সরেজমিন ঘুরে দেখা
যায়, প্রায় প্রতিটি দোকানে একটি
করে বিকাশের সাইনবোর্ড রয়েছে।
সাইনবোর্ডে বাংলায় বড় হরফে লেখা
রয়েছে ‘এখানে বাংলাদেশে বিকাশ
করা হয়’।
কিভাবে সিঙ্গাপুর থেকে
বাংলাদেশে টাকা পাঠানো হয়
জানতে চাইলে ‘বিকাশ’
সেবাদানকারী এক দোকানের
বাংলাদেশি কর্মচারী মোসলেম
উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সিঙ্গাপুরে অর্থ
নিচ্ছি। বাংলাদেশে আমাদের বিকাশ
এজেন্ট রয়েছে, আমাদের মাধ্যমে তথ্য
পেয়ে তারা বিকাশ করে দিচ্ছে। এ
ক্ষেত্রে আমরা ভাইবার অ্যাপে
এখানকার বিকাশ নম্বর ও টাকার
পরিমাণ বাংলাদেশের বিকাশ
এজেন্টকে জানিয়ে দিই। সঙ্গে সঙ্গে
সেটি নির্দিষ্ট নম্বরে বিকাশ হয়ে
যায়। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের
বুকিত বিনতাং, চায়না টাউনসহ বেশ
কিছু এলাকায়ও দেখা গেছে বিকাশের
মাধ্যমে বাংলাদেশে অর্থ পাঠানোর
সাইনবোর্ড।
জানা যায়, ঢাকার ইস্কাটনের একটি
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কাজল ইসলাম গত
মাসে ভারতের কলকাতায় যান। সেখান
থেকে দেশে আসার আগেই তাঁর অর্থ
খরচ হয়ে যায়। পরে তিনি তাঁর এক
সহকর্মীকে কলকাতার একটি বিকাশ
দোকানের নম্বর দিয়ে ২৫ হাজার টাকা
পাঠাতে বলেন। ঢাকায় এক বিকাশ
এজেন্টকে দেওয়া ২৫ হাজার টাকা দুই
মিনেটের মধ্যেই কাজল ইসলামের
হাতে পৌঁছে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কালের
কণ্ঠকে বলেন, বিকাশের মাধ্যমে
বিদেশ থেকে হুন্ডি করে টাকা আসছে,
আবার দেশ থেকেও হুন্ডি করে
বিদেশে টাকা পাঠানো হচ্ছে। তারা
বিভিন্ন অনৈতিক কাজেও অর্থ
স্থানান্তর করছে। এ ধরনের বেশ কিছু
ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকও জানে,
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও
কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
অপরাধীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে
কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এটা
রোধ করা সম্ভব হবে।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, অর্থপাচার
প্রতিরোধ ও অবৈধ লেনদেন বন্ধে
বিকাশের কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব
রয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচার করতে
বা হুন্ডি করে দেশে টাকা আনার
ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই এজেন্টদের কাছে
কোনো ধরনের বার্তা আসে। সেগুলো
সংরক্ষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক
যাচাই-বাছাই করতে পারে। এ ধরনের
অবৈধ লেনদেন বন্ধে দেশে আইন আছে,
শুধু যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি
গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদও
একই তথ্য দেন। তিনি কালের কণ্ঠকে
বলেন, শুধু বিকাশের মাধ্যমেই অবৈধ
হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ
আসছে, আবার বাংলাদেশ থেকে
বিদেশে অর্থ যাচ্ছে। এ খবর
বাংলাদেশ ব্যাংকও জানে। তারা
প্রায় বিকাশের তিন হাজার এজেন্ট
বাতিল করেছে।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন,
বিদেশ থেকে অর্থ আনতে বা দেশ
থেকে বিদেশে অর্থ পাঠাতে এক
ধরনের কোড ব্যবহার করে হুন্ডি
ব্যবসায়ীরা। বিকাশের এজেন্টরা যে
এর সঙ্গে যুক্ত তা সবাই জানার পরও
ধরা খুবই কঠিন। তবে বাংলাদেশ
ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট
(বিএফআইইউ) এসব বার্তা বা কোডের
ওপর নজরদারি করছে। যারা এসব
অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বিএফআইইউয়ের তৎপরতার মাধ্যমেই
বিকাশের মাধ্যমে অর্থপাচার
প্রতিরোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর
ও বিএফআইইউয়ের প্রধান আবু হেনা
মোহা. রাজী হাসান কালের কণ্ঠকে
বলেন, ‘বিকাশের দুই হাজার সাত শরও
বেশি এজেন্ট আমরা বাতিল করেছি।
আমাদের ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টের
ভিত্তিতে যেসব এজেন্ট গুরুতর
অপরাধের সঙ্গে জড়িত, আমাদের
দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের
বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ’
একটি বেসরকারি ব্যাংকের
ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাম
প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে
বলেছেন, বিকাশের মাধ্যমে অবৈধ
হুন্ডির কারণে তাঁর ব্যাংকের ছোট
অঙ্কের রেমিট্যান্স আসা অনেক কমে
গেছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য,
সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় প্রবাসী
বাংলাদেশিরা পাঁচ হাজার থেকে ৫০
হাজার টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্স
ব্যাংকের মাধ্যমে না পাঠিয়ে
বিকাশের মাধ্যমে পাঠাচ্ছে। কয়েক
বছর ধরে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার
পেছনে বিকাশের অবৈধ হুন্ডি
অনেকাংশে দায়ী বলেই মনে করেন
তিনি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিদেশে
থাকা বাংলাদেশি হুন্ডি
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে
দুইভাবে বিকাশের এজেন্টরা
অর্থপাচারের কাজটি করছে। সৌদি
আরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত
আরব আমিরাত, এমনকি অস্ট্রেলিয়া,
কানাডা ও যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি
অধ্যুষিত এলাকায় বিকাশের
সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অবৈধ অর্থপাচার
কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশের
বিকাশের এজেন্টরা তাদের কো-
এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
বিদেশ থেকে কেউ দেশে টাকা
পাঠাতে চাইলে ওই সব কো-এজেন্ট
বাংলাদেশিদের কাছ থেকে টাকা
নিয়ে দেশে থাকা বিকাশের
এজেন্টকে ফোন করে বা এসএমএস করে
যিনি টাকা পাঠাবেন তাঁর পরিবারের
মোবাইল নম্বর ও টাকার পরিমাণটা
জানিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যেই
বাংলাদেশ থেকে বিকাশের এজেন্ট
সংশ্লিষ্ট নম্বরে টাকা পাঠিয়ে
দিচ্ছে। ফলে বিদেশ থেকে
বাংলাদেশে কার্যত কোনো অর্থ
আসছে না। একইভাবে বাংলাদেশ
থেকে বিকাশের এজেন্টদের মাধ্যমে
অহরহই টাকা যাচ্ছে ভারতের কলকাতা,
চেন্নাইসহ বিভিন্ন শহর ও সিঙ্গাপুর,
মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে।
জানা যায়, বিকাশের ব্যবসায়িক
এজেন্টের ভূমিকায় থাকা একটি চক্র
বিদেশে যেসব এলাকায়
বাংলাদেশিরা বেশি থাকে, তার
নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে। তারা
মহল্লাভিত্তিক বিকাশের কো-এজেন্ট
নিয়োগ করে। বাংলাদেশের এজেন্ট
বা বিদেশে থাকা কো-এজেন্টের
মধ্যে সমন্বয় রাখতে তারা নির্দিষ্ট
সফটওয়্যার ব্যবহার করে। এজেন্টের
কাছে জামানত বাবদ নির্ধারিত
অঙ্কের অর্থ জমা দিলে সফটওয়্যারে
ঢুকতে পারে কো-এজেন্টরা। এরপর কো-
এজেন্টরা মাঠপর্যায়ে যাঁরা
বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে চান,
তাঁদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।
কো-এজেন্ট মোবাইল নম্বর ও টাকার
অঙ্ক সফটওয়্যারের মাধ্যমে পাঠিয়ে
দেয় দেশের বিকাশ এজেন্টের কাছে।
তখন এজেন্ট ওই সব নম্বরে নির্ধারিত
অঙ্কের অর্থ বিকাশ করে পাঠিয়ে
দেয়। মূলত সময় সাশ্রয় ও অর্থ সাশ্রয়ের
জন্যই প্রবাসীরা এ ধরনের হুন্ডি
ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিকাশে দেশে
টাকা পাঠাচ্ছেন।
বিকাশের মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন ও
মুদ্রাপাচারের মামলায় গত ৪ জানুয়ারি
দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান
চালিয়ে আট বিকাশ এজেন্টকে
গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত
বিভাগ সিআইডি। তারা সবাই
বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডি করে বিদেশ
থেকে অর্থ আনা ও বিদেশে
অর্থপাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে
অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয়
বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
(সিইও) কামাল কাদিরের সঙ্গে। তিনি
গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন,
‘আমরা সন্দেহজনক লেনদেনের
ব্যাপারে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ
ব্যাংকের কাছে তথ্য সরবরাহ করছি।
আমাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই
সন্দেহজনক এজেন্টদের ব্যাপারে তদন্ত
করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী অবৈধ অর্থ লেনদেনের সঙ্গে
যুক্ত বিকাশ এজেন্টদের গ্রেপ্তার
করছে। আমরা এ উদ্যোগকে সাধুবাদ
জানাই। এর ফলে সব এজেন্ট নিয়ম-
নীতি মেনে ব্যবসা করতে উদ্বুদ্ধ হবে। ’
বিদেশে বিকাশের লোগো ব্যবহার
সম্পর্কে কামাল কাদির বলেন, ‘এটি
সম্পূর্ণ অবৈধ। বিদেশে আমাদের
কোনো এজেন্ট নেই। বিদেশে
বাংলাদেশি দূতাবাস এবং স্থানীয়
আইনজীবী নিয়োগ করে আমরা
জানিয়ে দিয়েছি কেউ বিকাশের
লোগো ব্যবহার করলে তাদের
ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
কিছু অসাধু ব্যক্তি আমাদের এই
সেবাকে অপব্যবহার করার চেষ্টা করে
থাকে। তবে আমরা সজাগ থাকার
কারণে দিন দিন এই সংখ্যা কমে
আসছে। ’
0 coment rios: