’
ছিল এক হাজার ডলারেরও নিচে। বছর
শেষে এ সপ্তাহের শুরুতে এই ডিজিটাল
মুদ্রার দাম ওঠে রেকর্ড ১৯ হাজার ৫০০ ডলার।
গত সপ্তাহে বিটকয়েন নিয়ে এক
প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এ
বছরের শুরু থেকে বিটকয়েনের দাম
বেড়েছে ১৭০০ শতাংশ। শুধু ডিসেম্বরেই
দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশ। অনেকটা ঝড়ের
গতিতে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী হওয়া বিটকয়েন
কেন হ্যাকারদের লক্ষ্যবস্তু তা কারো
বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার হ্যাকিংয়ের শিকার হয়
দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্রিপ্টোকারেন্সি
এক্সচেঞ্জ ইউবিট। দ্বিতীয় দফা হ্যাকের
শিকার হওয়ায় নিজেদের কার্যক্রম গুটিয়ে
নিয়েছে প্রতিষ্ঠানিট। এ প্রতিষ্ঠানটি বিটকয়েন
ও অন্যান্য ডিজিটাল মুদ্রার বাণিজ্য করত।
ব্লুমবার্গ নিউজ জানায়, হ্যাকিংয়ের ঘটনায় এশিয়ার
বাজারে এক দিনেই ১৫ শতাংশ দর হারাল এই
ডিজিটাল মুদ্রা। গতকাল বুধবার টেকিওতে
বিটকয়েনের দাম কমে হয় ১৫ হাজার ৮১৫.৭৮
ডলার। যদিও মঙ্গলবার বিটকয়েনের দাম ছিল
১৮ হাজার ডলার।
তবে বিকেলে টোকিও এক্সচেঞ্জে
দাম কিছুটা বেড়ে হয় ১৬ হাজার ডলার।
এর আগে গত এপ্রিলেও হ্যাকিংয়ের শিকার
হয়েছিল ইউবিট। সে সময় প্রায় ৩৫ মিলিয়ন
ডলার সমমূল্যের চার হাজার বিটকয়েন চুরি হয়।
আট মাসের মাথায় আবারও এই ক্ষতির মুখে
পড়ে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা
করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা জানায়, হ্যাকের
কারণে তাদের ১৭ শতাংশ মূলধন খোয়া
গেছে। মঙ্গলবার হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়ার
পর থেকেই তারা বেচাকেনা বন্ধ
রেখেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে,
হ্যাকাররা তাদের সব বিটকয়েন চুরি করতে
পারেনি। কারণ কিছু বিটকয়েন নিরাপদে
সংরক্ষিত রাখা ছিল। ওই বিটকয়েনগুলো সাধারণত
লেনদেনের কাজে ব্যবহার করা হয় না। এই
চুরির জন্য উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারদের দায়ী
করা হচ্ছে।
এ মাসের শুরুতে হ্যাকাররা ডিজিটাল মুদ্রা
লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম নাইচহ্যাশ থেকে
৭৫ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বিটকয়েন চুরি
করে নিয়ে যায়। বিটকয়েনের সংখ্যা ছিল চার
হাজার ৭০০। গত বছর হংকংভিত্তিক এক্সচেঞ্জ
বিটফিনেক্স সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়
হ্যাকাররা ৬০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিটকয়েন
নিয়ে যাওয়ার পর। এ ছাড়া গত বছর হ্যাকাররা
ইউরোপীয় এক্সচেঞ্জ বিটস্ট্যাম্পে
ঢুকে ১৯ হাজার বিটকয়েন নিয়ে যায়।
এদিকে বাজার কারসাজি হচ্ছে—এমন উদ্বেগ
থেকে গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র তাদের
স্টকে বিটকয়েন সংশ্লিষ্ট লেনদেন বন্ধ
করে দেয়।
বিটকয়েন কেন চুরি হচ্ছে এ নিয়ে সাইবার
নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ক্রাউডস্ট্রাইকের সিইও
জর্জ কার্টজ সিএনবিসিকে বলেন,
বিটকয়েনে যেসব কম্পানি লেনদেন
করে তাদের সতর্ক হতে হবে। কারণ
উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা চুরি করে বিটকয়েন
জমা করছে। তিনি বলেন, এ মুদ্রা
লেনদেনে পরিচয় জানা যায় না,
যেকোনো নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে
লেনদেন করা যায়। এ ছাড়া এর দামও
নাটকীয়ভাবে বাড়ছে। ফলে উত্তর
কোরিয়ার জন্য এটি একটি চমৎকার মুদ্রা।
অনলাইনে ডলার-পাউন্ড-ইউরোর পাশাপাশি
কেনাকাটা করা যায় ক্রিপ্টোকারেন্সি
বিটকয়েনে। তবে অন্যান্য মুদ্রাব্যবস্থায়
যেমন সে দেশের সরকার ও
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জড়িত থাকে,
বিটকয়েনের ক্ষেত্রে তা নয়। ২০০৯
সালে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামের
কেউ কিংবা একদল সফটওয়্যার ডেভেলপার
নতুন ধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রার প্রচলন করে।
এ ধরনের মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সি নামে
পরিচিতি পায়। নাকামোতোর উদ্ভাবিত সেই
ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম দেওয়া হয়
বিটকয়েন।
বিটকয়েন লেনদেনে কোনো
ব্যাংকিংব্যবস্থা নেই। ইলেকট্রনিক মাধ্যমে
অনলাইনে দুজন ব্যবহারকারীর মধ্যে সরাসরি
(পিয়ার-টু-পিয়ার) আদান-প্রদান হয়।
লেনদেনের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয়
ক্রিপ্টোগ্রাফি নামের পদ্ধতি।
সাম্প্রতিক সময়ে বিটকয়েন আলোচনায়
আসার কারণ মূল্যস্ফীতি। বিটকয়েনে যারা
বিনিয়োগ করেছিল, হঠাৎই তাদের সম্পদ
বেড়েছে কয়েক শ গুণ। কিন্তু বিটকয়েন
কেন জনপ্রিয় হচ্ছে? নিজের পরিচয় প্রকাশ
না করেই এতে লেনদেন করা যায়।
অন্যদিকে লেনদেনের ব্যয় খুব কম।
তবে সবচেয়ে বড় কারণ হলো
বিটকয়েনে বিনিয়োগ করলে কয়েক গুণ
লাভ হবে—এমন একটা ধারণা অনেকের
মধ্যেই আছে।
এখনো অনেক দেশে মুদ্রা হিসেবে
স্বীকৃতি না পেলেও দ্রুত জনপ্রিয়তা
পাচ্ছে বিটকয়েন। ফলে অনেক দেশের
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিটকয়েনের জন্য
নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এ
মাসে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বড় এক্সচেঞ্জ
প্ল্যাটফর্ম বিটকয়েন লেনদেন শুরু করে।
এ ছাড়া এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও
আগ্রহী হয়ে উঠছে। ফলে বিটকয়েন
আগামী দিনের ডিজিটাল মুদ্রা হবে বলে
ধারণা করা হচ্ছে।
তবে বিটকয়েন এখনো একটি
নির্ভরযোগ্য মুদ্রা হিসেবে প্রমাণিত হয়নি
বলে মনে করেন জাপানের অর্থমন্ত্রী
তারো আসো। তিনি বলেন, এ কারণে এর
ভবিষ্যৎ গতিবিধি লক্ষ করতে হবে। আগামী
বছর জি-২০ বৈঠকে ভার্চুয়াল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ
ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেবে
ফ্রান্স। সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে
তারো বলেন, এখনো সুনির্দিষ্টভাবে ঠিক
হয়নি বিটকয়েন মুদ্রা না অন্য কিছু। এটি আসলে
জটিল একটি বিষয়। রয়টার্স, এএফপি, ব্লুমবার্গ।
0 coment rios: