বাজারে দেশি পেঁয়াজের ঝাঁজ আরও বেড়েছে।
এ সপ্তাহে কেজিপ্রতি দর ২০ টাকা বেড়ে ১৩০-১৪০
টাকা হয়েছে। দেড় শ হতে আর সামান্য বাকি। অবশ্য
ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে আগের দামেই,
কেজিপ্রতি ৮৫-৯০ টাকায়।
এক কেজি দেশি পেঁয়াজের দামে এখন বাজারে
অনেক কিছুই পাওয়া যায়। এক কেজি ব্রয়লার মুরগি পাওয়া
যাবে আরও ১০ টাকা কমে, ১২০ টাকায়। একই দামে
পাঙাশ, তেলাপিয়া কিংবা চাষের কই কেনা যায় সহজেই।
আর পেঁয়াজের বদলে আলু নিতে চাইলে পাওয়া
যাবে ৫ থেকে ৬ কেজি। একই দামে আপনি
পাবেন ২৪টি ডিম।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পেঁয়াজের
রেকর্ড দাম নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে।
‘পেঁয়াজের দাম’ এ শব্দ দুটি লিখে সার্চ দিয়ে
(খোঁজ) দেখুন, নানা রকমের পোস্ট চলে
আসবে। একজন লিখেছেন, ‘পেঁয়াজ দিয়ে রান্না,
আর না, আর না। চল গিয়ে দেখি মা রাঁধছে কী? ও
পেঁয়াজছাড়া তরকারি!’
আরেকজন লিখেছেন পেঁয়াজছাড়া চ্যাঁপা শুঁটকি রান্নার
রেসিপি। এক তরুণ শিঙারা খাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে
ধরেছেন এভাবে, ‘শিঙারা খাইতে গিয়া পেঁয়াজ
চাইতেই দোকানদার আরেকটি শিঙারা দিয়া কইল, “শিঙারা
দিয়া শিঙারা খান। পেঁয়াজ চাইবেন না”।’
সত্যিই কি রাজধানীতে এসব হচ্ছে? নারায়ণ চন্দ্র
ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী প্রমীলা ঘোষ ফার্মগেটের
পুলিশ বক্সের পাশে শিঙারা, ডালপুরি, ছোলা ও চা বিক্রি
করেন। জানতে চাইলাম, শিঙারা খাওয়ার পেঁয়াজ আছে?
প্রমীলা ঘোষ কাঠের বাক্স থেকে একটি বাটিতে
কিছু পেঁয়াজ কুচি দেখিয়ে বললেন, ‘কেউ খুব
করে চাইলে দিই। নইলে ভেতরেই থাকে।’
অন্য সময় শিঙাড়ার সঙ্গে পেঁয়াজ আর কাঁচা মরিচ
শোভা পায়। ক্রেতারা যতটুকু প্রয়োজন নিয়ে
নেন। এখন লুকিয়ে রাখা কেন? নারায়ণ চন্দ্র
বললেন, তিনি আড়াই শ গ্রাম দেশি পেঁয়াজ
কিনেছেন ৩৫ টাকায়। আর ৪৫ টাকায় আধা কেজি
কিনেছেন ভারতীয় পেঁয়াজ। এত দামের পেঁয়াজ
কি শিঙাড়ার সঙ্গে ইচ্ছেমতো খাওয়ার সুযোগ
দেওয়া যায়!
দাম অস্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় প্রমীলা ঘোষ রান্নায়
পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়েছেন। ছোলা রান্নায়
আগে আধা কেজি দিলে এখন এক পোয়ায় কাজ
সারেন তিনি। স্বামী ও এক সন্তান নিয়ে তিনজনের
সংসারে দিনে এখন আর তিন-চারটির বেশি পেঁয়াজ
ব্যবহার করেন না। আক্ষেপের সুরে বলেন,
‘ফুটপাতে দোকানদারি করে ৫০ টাকা কেজি দরে চাল
আর ১৪০ টাকা কেজির পেঁয়াজ খাওয়া যায়!’
পেঁয়াজের এত দাম আগে কখনো দেখেননি
কারওয়ান বাজারের ঝালমুড়ি বিক্রেতা আবদুস সাত্তার। তাঁর
বয়স ৬০ পেরিয়েছে। ষাটের দশকে তিনি নিজেই
৫০ পয়সা দরে পেঁয়াজ কিনেছেন। এখন অবশ্য
সেই দাম আশা করেন না। বলেন, ‘মৌসুমের সময়
যে পেঁয়াজ ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়, তা এখন ১৩০ টাকা
হয় কী করে? লাভেরও তো একটা সীমা থাকা
উচিত।’ আবদুস সাত্তার ঝালমুড়ির খরচ কমাতে এখন
পেঁয়াজের সঙ্গে কিছু পেঁয়াজ পাতাও মিশিয়ে
দিচ্ছেন। বেশি দিচ্ছেন শসা।
ঢাকার বাজারে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ পাতা উঠতে শুরু
করেছে। কেজি ৪০ টাকা। পাতার গোড়ায় কচি কচি
পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে। কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা
মো. মোস্তফা জানালেন, নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ
উঠতে আরও সপ্তাহ দু-এক লাগতে পারে। তাঁর
দোকানে ছোট দেশি পেঁয়াজ ১৩০, ভারতীয়
পেঁয়াজ ৮৫ ও ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল।
এভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁর বিক্রি কমে গেছে।
আগে দিনে তিনি ৭০ কেজির ৪ বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি
করতে পারতেন, এখন পারছেন এক বস্তার মতো।
দেশে গত বছর এ সময়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের
দাম সর্বোচ্চ ৪০ টাকা ছিল। এখন তা ২১৫ শতাংশ বেশি
বলে জানাচ্ছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন
অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। পাঁচ ছয় মাস ধরেই পেঁয়াজের
দর বেশ চড়া। তবে দেশি পেঁয়াজ শতক হাঁকায় গত
মাসে। নিজেদের বাজার সামাল দিতে গত ২৩
নভেম্বর ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে সর্বনিম্ন
মূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। ডলারের
এখনকার মূল্য ৮৩ টাকা ধরলে প্রতি কেজি ভারতীয়
পেঁয়াজের আমদানি মূল্য দাঁড়ায় ৭০ টাকার বেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে,
২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত
হয়েছে ১৮ লাখ ৬৬ হাজার টন, যা আগের বছরের
চেয়ে ১ লাখ ৩১ হাজার টন বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক
বলছে, বিগত অর্থবছরে ১০ লাখ ৪১ হাজার টন পেঁয়াজ
আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩ লাখ
৪০ হাজার টন বেশি। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে
পেঁয়াজের জোগান এসেছে ২৯ লাখ টন। অবশ্য
চাহিদা ২৩-২৪ লাখ টন বলে ধারণা করা হয়।
এত সরবরাহের পরও দাম এত বেশি কেন, সে উত্তর
নেই বাজারে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের সোজা উত্তর,
বেশি দামে কিনতে হয়, তাই বিক্রিও বেশি দামে।
অবশ্য সুখবর হলো, ভারতে দাম কিছুটা কমেছে।
দেশটির ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া গত সোমবার
এক খবরে জানায়, বাড়তি সরবরাহে দিল্লিতে ৮০ রুপি
থেকে কমে পেঁয়াজের কেজি ৫০-৬০ রুপিতে
নেমেছে। অবশ্য ভারত ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য
বেঁধে দিয়েছে, যার মেয়াদ শেষ হবে ৩১
ডিসেম্বর। তত দিনে দেশি পেঁয়াজ বাজারে উঠতে
শুরু করবে।
এ সপ্তাহে কেজিপ্রতি দর ২০ টাকা বেড়ে ১৩০-১৪০
টাকা হয়েছে। দেড় শ হতে আর সামান্য বাকি। অবশ্য
ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে আগের দামেই,
কেজিপ্রতি ৮৫-৯০ টাকায়।
এক কেজি দেশি পেঁয়াজের দামে এখন বাজারে
অনেক কিছুই পাওয়া যায়। এক কেজি ব্রয়লার মুরগি পাওয়া
যাবে আরও ১০ টাকা কমে, ১২০ টাকায়। একই দামে
পাঙাশ, তেলাপিয়া কিংবা চাষের কই কেনা যায় সহজেই।
আর পেঁয়াজের বদলে আলু নিতে চাইলে পাওয়া
যাবে ৫ থেকে ৬ কেজি। একই দামে আপনি
পাবেন ২৪টি ডিম।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পেঁয়াজের
রেকর্ড দাম নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে।
‘পেঁয়াজের দাম’ এ শব্দ দুটি লিখে সার্চ দিয়ে
(খোঁজ) দেখুন, নানা রকমের পোস্ট চলে
আসবে। একজন লিখেছেন, ‘পেঁয়াজ দিয়ে রান্না,
আর না, আর না। চল গিয়ে দেখি মা রাঁধছে কী? ও
পেঁয়াজছাড়া তরকারি!’
আরেকজন লিখেছেন পেঁয়াজছাড়া চ্যাঁপা শুঁটকি রান্নার
রেসিপি। এক তরুণ শিঙারা খাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে
ধরেছেন এভাবে, ‘শিঙারা খাইতে গিয়া পেঁয়াজ
চাইতেই দোকানদার আরেকটি শিঙারা দিয়া কইল, “শিঙারা
দিয়া শিঙারা খান। পেঁয়াজ চাইবেন না”।’
সত্যিই কি রাজধানীতে এসব হচ্ছে? নারায়ণ চন্দ্র
ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী প্রমীলা ঘোষ ফার্মগেটের
পুলিশ বক্সের পাশে শিঙারা, ডালপুরি, ছোলা ও চা বিক্রি
করেন। জানতে চাইলাম, শিঙারা খাওয়ার পেঁয়াজ আছে?
প্রমীলা ঘোষ কাঠের বাক্স থেকে একটি বাটিতে
কিছু পেঁয়াজ কুচি দেখিয়ে বললেন, ‘কেউ খুব
করে চাইলে দিই। নইলে ভেতরেই থাকে।’
অন্য সময় শিঙাড়ার সঙ্গে পেঁয়াজ আর কাঁচা মরিচ
শোভা পায়। ক্রেতারা যতটুকু প্রয়োজন নিয়ে
নেন। এখন লুকিয়ে রাখা কেন? নারায়ণ চন্দ্র
বললেন, তিনি আড়াই শ গ্রাম দেশি পেঁয়াজ
কিনেছেন ৩৫ টাকায়। আর ৪৫ টাকায় আধা কেজি
কিনেছেন ভারতীয় পেঁয়াজ। এত দামের পেঁয়াজ
কি শিঙাড়ার সঙ্গে ইচ্ছেমতো খাওয়ার সুযোগ
দেওয়া যায়!
দাম অস্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় প্রমীলা ঘোষ রান্নায়
পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়েছেন। ছোলা রান্নায়
আগে আধা কেজি দিলে এখন এক পোয়ায় কাজ
সারেন তিনি। স্বামী ও এক সন্তান নিয়ে তিনজনের
সংসারে দিনে এখন আর তিন-চারটির বেশি পেঁয়াজ
ব্যবহার করেন না। আক্ষেপের সুরে বলেন,
‘ফুটপাতে দোকানদারি করে ৫০ টাকা কেজি দরে চাল
আর ১৪০ টাকা কেজির পেঁয়াজ খাওয়া যায়!’
পেঁয়াজের এত দাম আগে কখনো দেখেননি
কারওয়ান বাজারের ঝালমুড়ি বিক্রেতা আবদুস সাত্তার। তাঁর
বয়স ৬০ পেরিয়েছে। ষাটের দশকে তিনি নিজেই
৫০ পয়সা দরে পেঁয়াজ কিনেছেন। এখন অবশ্য
সেই দাম আশা করেন না। বলেন, ‘মৌসুমের সময়
যে পেঁয়াজ ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়, তা এখন ১৩০ টাকা
হয় কী করে? লাভেরও তো একটা সীমা থাকা
উচিত।’ আবদুস সাত্তার ঝালমুড়ির খরচ কমাতে এখন
পেঁয়াজের সঙ্গে কিছু পেঁয়াজ পাতাও মিশিয়ে
দিচ্ছেন। বেশি দিচ্ছেন শসা।
ঢাকার বাজারে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ পাতা উঠতে শুরু
করেছে। কেজি ৪০ টাকা। পাতার গোড়ায় কচি কচি
পেঁয়াজও পাওয়া যাচ্ছে। কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা
মো. মোস্তফা জানালেন, নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ
উঠতে আরও সপ্তাহ দু-এক লাগতে পারে। তাঁর
দোকানে ছোট দেশি পেঁয়াজ ১৩০, ভারতীয়
পেঁয়াজ ৮৫ ও ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল।
এভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁর বিক্রি কমে গেছে।
আগে দিনে তিনি ৭০ কেজির ৪ বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি
করতে পারতেন, এখন পারছেন এক বস্তার মতো।
দেশে গত বছর এ সময়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের
দাম সর্বোচ্চ ৪০ টাকা ছিল। এখন তা ২১৫ শতাংশ বেশি
বলে জানাচ্ছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন
অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। পাঁচ ছয় মাস ধরেই পেঁয়াজের
দর বেশ চড়া। তবে দেশি পেঁয়াজ শতক হাঁকায় গত
মাসে। নিজেদের বাজার সামাল দিতে গত ২৩
নভেম্বর ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে সর্বনিম্ন
মূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। ডলারের
এখনকার মূল্য ৮৩ টাকা ধরলে প্রতি কেজি ভারতীয়
পেঁয়াজের আমদানি মূল্য দাঁড়ায় ৭০ টাকার বেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে,
২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত
হয়েছে ১৮ লাখ ৬৬ হাজার টন, যা আগের বছরের
চেয়ে ১ লাখ ৩১ হাজার টন বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক
বলছে, বিগত অর্থবছরে ১০ লাখ ৪১ হাজার টন পেঁয়াজ
আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩ লাখ
৪০ হাজার টন বেশি। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে
পেঁয়াজের জোগান এসেছে ২৯ লাখ টন। অবশ্য
চাহিদা ২৩-২৪ লাখ টন বলে ধারণা করা হয়।
এত সরবরাহের পরও দাম এত বেশি কেন, সে উত্তর
নেই বাজারে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের সোজা উত্তর,
বেশি দামে কিনতে হয়, তাই বিক্রিও বেশি দামে।
অবশ্য সুখবর হলো, ভারতে দাম কিছুটা কমেছে।
দেশটির ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া গত সোমবার
এক খবরে জানায়, বাড়তি সরবরাহে দিল্লিতে ৮০ রুপি
থেকে কমে পেঁয়াজের কেজি ৫০-৬০ রুপিতে
নেমেছে। অবশ্য ভারত ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য
বেঁধে দিয়েছে, যার মেয়াদ শেষ হবে ৩১
ডিসেম্বর। তত দিনে দেশি পেঁয়াজ বাজারে উঠতে
শুরু করবে।
0 coment rios: